Fake ফ্রিলান্সিং সাইট সম্বন্ধে সতর্ক হঊন

প্রিয় পাঠকগন, সবাই কেমন আছেন? আশা করি আল্লাহ্‌র রহমতে অনেক ভালই আপনাদের দিন কাটছে। আমিও আপনাদের সকলের দোয়ায় ভাল আছি। 

যারা ফ্রিল্যান্সিং শব্দটাকে ব্যবহার করে মানুষকে প্রতারণা করতে চায় তাদের সম্পর্কে আজ কিছু লিখব।

এর আগেও আমি আরেকটা আটিকেলে বলেছি- ইন্টারনেট থেকে আয় বিষয়টা এখন অনেকের কাছে পরিচিতি লাভ করেছে। সফল ফ্রিল্যান্সার বা ব্লগারের আত্মকাহীনি  পড়ে বা পত্র-পত্রিকা থেকে জেনে অনেকের মনেই আউটসোর্সিংয়ের আগ্রহ জাগে। এটা ভাল কথা। এখন জিনিসটা হয়ে দাঁড়ায় এরকম, একজন নতুন ইন্টারনেট ব্যবহারকারী যার সূচনা হয়েছে ফেসবুক বা এরকম কোন সোসিয়াল মিডিয়া সাইট ব্যবহার করার মাধ্যমে। এরকম লোক হঠাৎ করে দেখতে পেল “ঘরে বসে ইন্টারনেট থেকে আয় করুন” এরকম একটি এ্যাড। এ্যাডটা চেখে পড়ামাত্রই সে ভাববে, এটাই সেই জিনিস যা সে পত্রিকায় বা কোন ব্লগে পড়েছিল, অথবা কারো কাছ থেকে ইন্টারনেটে আয়ের কথা শুনেছিল। স্বভাবতই কিছু না বুঝেই সে ঐ এ্যাডটিতে ক্লিক করবে এবং সে ক্লিক করল। আর কিছু না বুঝার কারণেই ঢুকে পড়ল পি,টি,সি বা এম,এল,এম এর মতো কিছু অসাধু কোম্পানিগুলোতে। দেখতে পেল ইন্টারনেট থেকে আয় খুব সহজ একটা বিষয়, শুধু এ্যাডে ক্লিক করুন আর টাকা আয় করুন। আর কিছু দিন পরে দেখা যায়, এ্যাডও নাই, ক্লিকও নাই, টাকাও নাই এবং সাইট কর্তৃপক্ষও নাই। এখন দোষ কার? উত্তরে বলবে- ইন্টারনেটে আয় করা যায় না, এসব ভুয়া।
মাত্র ১ বছর আগেও আমার অনেক বন্ধুদের দেখতে পাই যারা মাউসটাও ঠিকমত ব্যবহার করতে জানেনা, তারাও ইন্টারনেট থেকে আয় করছে। আমাকে বলে, “তুই আয় করার আসল মাধ্যম জানিস না। আমরা জানি।” বললাম কিভাবে? উত্তর দিল- সাইটটক থেকে। এখন দুরের কাউকে নয়, আমার বন্ধুদেরকেই প্রশ্ন করি, আজ কোথায় গেল আপনাদের ঐ সাইটটক? আফসোস, শুধু শুধু সময়টা নষ্ট করলেন।
আরো বন্ধু আছেন, যারা নিজের বাপের কাছ থেকে ক্যাশ টাকা এনে ইউনি পে টু ইউ তে ইনভেশ্ট করলেন। একমাসে কিছু আয় করলেন, বাপের কাছ থেকে আরো টাকা আনলেন এবং নিজের গতমাসের টাকা যোগ করে এখন এক্কেবারে একটা মোটর বাইক কিনলেন। এখন, লোক মনে করবে জনাব হয়তো  ইউনি পে টু ইউ থেকে টাকা আয় করে বাইক কিনেছে, তাহলে আমার রেফারেন্সে আরো লোক ঢুকবে। কি মজা! Unipay2u তে শুধু টাকা আর টাকা! কিন্তু কয়েকদিন পর দেখা যায় সব টাকা হাতিয়ে নিয়ে Unipay2u তার বাড়িতে ফিরে গেল। মাঝখানে প্রতারিত হল কারা? আমার দেশের বেকার যুবক। যারা নিজের একটা পজিশনের জন্য অনেক স্বপ্ন দেখছিল। এখন, সমাজ ও লোকদের কাছেতো প্রতারক হলই, সাথে সাথে পরিবারে নিজের ব্যাক্তিত্বটাও নষ্ট করল। আর বন্ধুরা দেখে তো টাকা ধার চাইবে বলে “১০০ হাত দুরে থাকুন” এই ধরনের সিগনাল দেয়।
বর্তমানের Unipay2u এবং সাইটটক:
ইউনি পে টু ইউ এবং সাইটটক দেশ ছেড়ে দিয়েছে। কিন্তু এদের চরিত্রকে আদর্শ করে এখন বেড়িয়েছে আরো কিছু সাইট। যারা ফ্রিল্যান্সিংয়ের নামে তৈরী করছেন আরো এক চরম প্রতারণার ফাঁদ। এরা সেই বেকার যুবকদেরকেই টার্গেট করেছে। এবারো টার্গেট, কাজ না করেই টাকা আয় করার পদ্ধতি। আসলে কাজ না করেই যদি টাকা আয় করা যেত তাহলে আমি অনলাইনে প্রথম কাজটা ২ বছর আগেই পেতাম। ২ বছরে অনলাইন থেকে কিছু শিখে তারপর মাত্র কয়েকমাস আগে ওডেস্কে নিজের প্রথম কাজটা পেয়েছি। আর উনারা নাকি বিনা কাজেই টাকা দিবেন। আরে ভাই, মাত্র একটা কাজের জন্য যেখানে একঝাক দক্ষ ফ্রিল্যান্সার বিড করেন, সেখানে আপনি বিনা দক্ষতা দিয়েই একজন লোককে ফ্রিল্যান্সার বানিয়ে দিবেন!! আমাদের দেশেরই কিছু অসাধু লোক, এরকম স্বপ্ন দেখিয়ে দেশের বেকার যুবকদের অলস করে দিচ্ছে। আবারো ঐ এম.এল.এম নামধারী কিছু লোক বেকারত্বের সুযোগ নিয়ে হাতিয়ে নিতে চাচ্ছে কোটি কোটি টাকা। এই বার Unipay2u এর আদর্শকে ধরে মাঠে এসেছে dolancer.com । ফ্রিল্যান্সিংয়ের নামধারী এই সাইটটা নিজেদের প্রচারনার জন্য খুব বেশি তৎপর হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন পত্রিকায় টাকা দিয়ে তাদের রিভিউ ছেপে সেরা ফ্রিল্যান্সিং সাইট বলে একটা মিথ্যা অপপ্রচারণা চালাচ্ছে। এদের চিন্তা-ধারা দীর্ঘমেয়াদী হতে যাচ্ছে। অনলাইনে আগত নতুন যুবকদেরকে এরা টাকা আয়ের নামে ভুলপথে নিয়ে যাচ্ছে। ডেস্টেনির মত এরাও নেটওয়ার্ক বিস্তার করতে চায়।  এদের সদস্য হতে হলে ১০০ ডলার (৭০০০টাকা) দিতে হয়। একটি ব্লগে আমি তাদের কিছু তথ্য দেখতে পেয়েছিলাম-
তাদের সাইটের হোম পেজে তারা দাবী করছে যে “The world’s largest outsourcing & Website leasing marketplace! কিন্তু নিচে দেখুন এদের অবস্থা-
  • 43644 freelance professionals
  • $559013.72 user earnings
  • 0 projects completed
  • 6 projects available
একটা প্রজেক্টও কমপ্লিট হয়নি তারা আবার বলছে তারা নাকি বিশ্বের সবচেয়ে বড় আউটসোর্সিং সাইট। এখন কি বলা যায়? আবার তারা বলে তাদের নাকি ১২ বছরের অভিজ্ঞতা আছে। কিন্তু সত্যি কথা হল- তাদের ডোমেইনটা কেনা হয়েছে ২০ ফেব্রুয়ারী ২০১১ তে। আজ ১৭ ফেব্রুয়ারী-২০১২, এখনো পুরোপুরি ১ বছরও হয়নি আর দাবি করছে ১২ বছরের। আমার কথা বিশ্বাস না হলে এখানে ক্লিক করে আপনারাই দেখে আসেন আসল সত্যটা। এখন বলেন, এদেরকে কি বলা যায়?
তাদের সাইটের সার্ভিসে দেখবে লেখা আছে “Click To Earn”. উফ!! আবারো সেই PTC। জানা গেছে, তারা নাকি এই পিটিসির কাজের জন্য প্রথম মাসে ইউজারকে ২১০০ টাকা প্রদান করে। চলুন, একটা ছোট হিসেব করে নেই- প্রথমে ৭০০০টাকা দিয়ে তাদের ম্যাম্বার হওয়ার পর তারা আপনাকে ২১০০ টাকা দিল। এতে লাভ কার হলো আর ক্ষতিটা কার হল?

ফ্রিল্যান্সিং-এ আগ্রহীদের জন্য কিছু কথা:

ভাইয়েরা, একটা কথা বলি- এইসব সাইটগুলো আপনাদেরকে অলস করে রেখে দিচ্ছে। এদেরকে ভুলে গিয়ে কাজ শেখায় মনোযোগ দেন। কিছু কষ্ট করে কাজ শিখে নেন। দেখবেন আপনাকে কাজের পিছনে ঘুরতে হচ্ছে না, কাজই আপনার পেছনে ঘুরছে। যেখানে আপনার হাতের কাছেই আছে ইন্টারনেট সেখানে আপনাকে আর কেন কোথাও যেতে হবে?  হ্যাঁ, শিখতে তো একটু কষ্ট হবেই। বিভিন্ন ইংরেজী টিউটোরিয়াল সাইটগুলো দেখতে পারেন। তবে সহজে বাংলা টিউটোরিয়ালের জন্য আপনি আল-হেরা মাল্টিমিডিয়ার ভিডিও প্যাকেজগুলো সংগ্রহ করতে পারেন। এখান থেকেও আপনি শিখতে পারবেন অনেককিছু, যা আপনাকে ফ্রিল্যান্সিং এ প্রফেশনালি দক্ষ করে গড়ে তুলবে।
যারা অনলাইনে আয়ের সঠিক কথাগুলো জানেন তাদেরকে বলছি- আপনার পাশের মানুষগুলোকে আর এই ধরনের ফেক  সাইটের মাধ্যমে প্রতারিত হতে দিবেন না। যারা আসল কথাটা জানেনা, তাদেরকে বুঝিয়ে বলুন। এই নতুন মেধাগুলোকে সঠিক পথে নিয়ে আসুন। সবার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করে আজ এখানেই বিদায় নিচ্ছি।

*এই পোস্টটি AL-HERABD থেকে নেয়া হয়েছে ।

No comments: